সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে, USD/JPY পেয়ারের মূল্য আড়াই মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেভেলে 139.60-এ পৌঁছানোর পর বিপরীতমুখী হয়ে 1,500 পয়েন্টের বেশি বৃদ্ধি পায়, যার ফলে গত সপ্তাহে মূল্য 156.76-এ পৌঁছে। এই দর বৃদ্ধির পর 250-পিপসের একটি উল্লেখযোগ্য কারেকশন ঘটে। এই সপ্তাহে, এই পেয়ারের মূল্যের মিশ্র গতিশীলতা দেখা গেছে: বুধবার 130-পিপস বৃদ্ধির পর বৃহস্পতিবার এই পেয়ার 100-পিপসের দরপতনের শিকার হয়েছে। অস্পষ্ট মৌলিক প্রেক্ষাপটে এই পেয়ারের ট্রেডাররা একটি স্পষ্ট দিকনির্দেশ খুঁজে পেতে লড়াই করছে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে, বড় রাজনৈতিক ঘটনাগুলোর প্রভাবে USD/JPY পেয়ারের মূল্যের বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে জাপান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়েছে। জাপানের পার্লামেন্টারি নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পরে দেখা যায় লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অপ্রত্যাশিতভাবে পরাজয়ের শিকার হয়, যার ফলে প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা পদত্যাগের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছান। এই রাজনৈতিক সংকট মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, যেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হন। এই "অস্থির পরিস্থিতি"-এর মধ্যে, এই পেয়ারের মূল্য 1,500 পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়। তবে, এই পেয়ারের মূল্যের গত সপ্তাহের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা গতিশীলতা হারিয়েছে যখন প্রাথমিকভাবে "ট্রাম্পের জয়ের প্রভাব" ফিকে হয়ে যায় এবং ইশিবা আবার জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে পুনর্নির্বাচিত হন।
রাজনৈতিক অস্থিরতা কমে যাওয়ায়, আবার মৌলিক বিষয়গুলোর দিকে মনোযোগ ফিরে এসেছে, বিশেষ করে ব্যাংক অফ জাপান (BOJ) এবং ফেডারেল রিজার্ভের মধ্যে নীতিমালা সংক্রান্ত পার্থক্যের দিকে। পূর্বাভাস অনুযায়ী ফেডের ডিসেম্বরে বৈঠকে সুদের হার কমানোর 51% সম্ভাবনা রয়েছে। বিকল্প দৃশ্যপট অনুযায়ী সুদের হার অপরিবর্তিত রাখার 49% সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থাৎ, ফেডের সুদের হার হয় কমবে, নয়তো মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার হ্রাসে বিরতি দেবে।
ব্যাংক অব জাপানের ডিসেম্বরে বৈঠকের ব্যাপারে পূর্বাভাস রয়েছে যে ব্যাংকটি পর্যবেক্ষণমূলক অবস্থান বজায় রাখতে পারে। বিকল্প দৃশ্যপট অনুযায়ী ব্যাংক অভ জাপান সুদের হার বৃদ্ধি করতে পারে।
অন্য কথায়, মূল সম্ভাবনা অনুযায়ী সার্বিক পরিস্থিতি USD/JPY পেয়ারের বিক্রেতাদের পক্ষে থাকবে।
অক্টোবরের শেষের দিকে, ব্যাংক অব জাপান তাদের আর্থিক নীতিমালা অপরিবর্তিত রাখে তবে আরেকবার সুদের হার বৃদ্ধির সম্ভাবনার দিকে ইঙ্গিত দেয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রান্তিক ভিত্তিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী বছরগুলোতে মুদ্রাস্ফীতি প্রায় 2%-এ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে এবং মার্চ মাসে শেষ হওয়া অর্থবছরের শেষে ভোক্তা মূল্য সূচক (CPI) 2.5%-এ পৌঁছানোর পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
ব্যাংক অব জাপানের গভর্নর কাজুও উয়েদা সম্প্রতি একটি সংবাদ সম্মেলনে মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমশ মজুরি ও পণ্যের মূল্য বাড়াতে আগ্রহী হচ্ছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে ব্যাংক অব জাপানের তাদের অর্থনৈতিক ও মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আর্থিক নীতিমালার নমনীয়করণ কার্যক্রম সমন্বয় করতে থাকবে।
এই প্রেক্ষাপটে, জাপানের মুদ্রাস্ফীতির প্রতিবেদন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। যদি এই প্রতিবেদন প্রধান সূচকগুলো আবার দ্রুত বৃদ্ধি পায়, তাহলে ডিসেম্বরে সুদের হার বৃদ্ধির সম্ভাবনা বেড়ে যাবে, যা USD/JPY পেয়ারের মূল্যকে তীব্রভাবে কমিয়ে 151-152 রেঞ্জের দিকে নামিয়ে দিতে পারে। অন্যদিকে, যদি মুদ্রাস্ফীতি আরও হ্রাস পায়, তাহলে ইয়েন তীব্র চাপের মুখে পড়তে পারে।
জাপানের অক্টোবরের মুদ্রাস্ফীতি প্রতিবেদন ২২ নভেম্বর এশিয়ান সেশনে প্রকাশিত হবে। প্রাথমিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, হেডলাইন CPI 2.2%-এ নেমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা জানুয়ারি 2024 থেকে সবচেয়ে দুর্বল গতি নির্দেশ করে। যদি এই সূচক পূর্বাভাসের স্তরে (বা নিম্নমুখী) থাকে, তাহলে এটি টানা দ্বিতীয় মাসের মতো নিম্নমুখী হবে। কোর CPI (যা তাজা খাদ্যের মূল্য বাদ দিয়ে বিবেচনা করা হয়) 2.2%-এ নামবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা এই বছরের এপ্রিলের পর সবচেয়ে দুর্বল প্রবৃদ্ধির হার নির্দেশ করে। এটি মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত টানা চার মাসের বৃদ্ধির ধারার পর পরপর দ্বিতীয় মাসের জন্য পতন নির্দেশ করবে।
যেমনটি দেখা যাচ্ছে, প্রাথমিক পূর্বাভাস ইয়েনের পক্ষে কাজ করবে না। তবে, যদি পূর্বাভাসের বিপরীতে জাপানে মুদ্রাস্ফীতি আবার বৃদ্ধি পায় (বিশেষত যদি কোর CPI বৃদ্ধি পায়), তাহলে USD/JPY পেয়ারের বিক্রেতারা মার্কেটে আরও সক্রিয় হতে পারে।
এই অনিশ্চয়তার মধ্যে, অপেক্ষা ও পর্যবেক্ষণের কৌশল বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে। আসন্ন মুদ্রাস্ফীতি প্রতিবেদনটি এই পেয়ারের মূল্যের উল্লেখযোগ্য অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে, তবে মূল্যের দিকনির্দেশনা প্রকাশিত ফলাফলের উপর নির্ভর করবে।
টেকনিক্যাল দৃষ্টিকোণ থেকে, USD/JPY পেয়ার গত শুক্রবার থেকে বলিঙ্গার ব্যান্ডস সূচকের মধ্যম ও উপরের লাইনের মধ্যে ট্রেড করছে, যা 153.60–156.20 রেঞ্জের মধ্যে অবস্থিত। যদি এই পেয়ারের বিক্রেতারা মূল্যকে এই রেঞ্জের নিম্ন সীমা অতিক্রম করাতে পারে, তাহলে নিম্নমুখী মুভমেন্টের পরবর্তী লক্ষ্যমাত্রা হবে 151.20, যা দৈনিক চার্টে বলিঙ্গার ব্যান্ডের নিম্ন লাইন। অন্যদিকে, যদি মূল্য 156.20-এর উপরে চলে যায়, তাহলে মূল্য 159.00-এ পৌঁছাতে পারে, যা সাপ্তাহিক চার্টে বলিঙ্গার ব্যান্ডের উপরের লাইন।